খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  খুলনার ঘাট এলাকা থেকে খাদ্য পরিদর্শককে অপহরণ
  যুবদল নেতা মাহবুব হত্যা, ২ দিনের রিমান্ডে সজল
  গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪২০
  চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরতে চিরুনি অভিযান : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  ৬ষ্ঠ বছরে পদার্পণে খুলনা গেজেট’র সকল পাঠক, লেখক, সংবাদকর্মী, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে আন্ত‌রিক শুভেচ্ছা

পরীক্ষার্থী মাত্র একজন, তাও ফেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, নড়াইল

নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মুড়দাইড় গ্রামে অবস্থিত মুলদাইড়-তালতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মাত্র একজন শিক্ষার্থী অংশ নেন। ফলাফল প্রকাশে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থীও অকৃতকার্য হয়েছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে মাত্র সাতজন ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করে। পরে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে তারা দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু নিয়মিত ক্লাসে অংশ না নেওয়ায় ও নানা সামাজিক কারণে শেষ পর্যন্ত ছাত্রীদের অধিকাংশই ঝরে পড়ে। তাদের মধ্যে তিনজন বাল্যবিবাহের কারণে, তিনজন শিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করে। একজনই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেন, তবে তিনিও পাস করতে পারেননি।
১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি শুরুতে ছিল জমজমাট। ২০০০-এর দশকে স্কুলটির ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক। ২০১৩ সালে এসএসসিতে ১৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হন। কিন্তু স্কুলটি দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। ফলে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে।
২০২১ সালে সাতজন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হন। ২০২২ সালে তিনজন পরীক্ষার্থী পাস করেন। তবে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেননি। সর্বশেষ ২০২৫ সালে একজন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ফেল করলেন।
বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আলীম ফকির বলেন,“২৮ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। একসময় এ বিদ্যালয় থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণ ছিল, আগ্রহ ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন। আমরা অনেক চেষ্টা করেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারছি না। এই অবস্থায় কিছু বলার ভাষা নেই। বর্তমানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং অন্যান্য তথ্য জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’’
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী মুক্তা খানম বলেন, “আমি ২০০৪ সালে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছি। তখন স্কুলের পরিবেশ ভালো ছিল, শিক্ষক ছিলেন ৭ জন। এখন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের পড়ার এবং পড়ানোর ব্যাপারে আর আগ্রহ নেই।”
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিদ্যালয়ের ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের গাফিলতি রয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখেন না। আমরা আইসিটি ল্যাব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা নেয়নি। এমনকি কোনো প্রশিক্ষণেও অংশ নেয় না। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি, প্রয়োজনে শোকজ করা হবে।”
বিদ্যালয়টির এমন দুর্দশায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, দ্রুত স্কুলটিকে এমপিওভুক্ত করে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ ও সরকারি নজরদারি নিশ্চিত করা না গেলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
খুলনা গেজেট/এস এস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!